আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অন্ধ সমালোচনা গণতান্ত্রিক সমাজের সহায়ক নয় ।
তিনি বলেন, “অবশ্যই সরকারের ভুল যে কেউ ধরিয়ে দিবে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এটি থাকতে হবে। আমরা সেটিতে বিশ^াস করি। আমরা মনে করি সমালোচনা কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়ক। কিন্তু অন্ধের মতো সমালোচনা বা যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’ সেই মনোবৃত্তি থেকে সমালোচনা কখনো সহায়ক নয়।”
তথ্যমন্ত্রী আজ বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত সাংবাদিকদের মধ্যে করোনাকালীন সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশ এই করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রস্তত ছিলনা। আমরা আমাদের সীমিত সামর্র্থ নিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে কম এবং ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে অনেক কম। আমরা যদি সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারতাম, মৃত্যুর হার ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে অন্তত বেশি হতো।’
উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য সবাই মিলে এই মহামারি মোকাবিলা করে দেশ ও অর্থনীতিকে রক্ষার উদাত্ত আহ্বন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আসুন আমরা সবাই মিলে এই মহামারিকে মোকাবেলা করি। আমাদের দেশ ও অর্থনীতিকে রক্ষা করি, আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে, সেইলক্ষ্যে আমরা যেন কাজ করি।”
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমন শুরু হবার পর অনেকেই শঙ্কা-আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। অনেক ধরণের বিশেষজ্ঞ নানা ধরণের মত দিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকের ধারণা ও মতামত ভুল প্রমাণিত হয়ে আজকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সাড়ে তিনমাসে বাংলাদেশে আল্লাহর রহমতে একজন মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি।
তিনি বলেন, ‘অনেকে আশা করেনি এধরণের সাহায্য সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। কিন্তু সরকার মোবাইল ফোনে মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছে। মসজিদের ইমামদের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছে। প্রায় ৭ কোটি মানুষ সরাসরিভাবে সরকারের সহায়তা পেয়েছে। আমাদের দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে। মানুষের জন্য ত্রাণ তৎপরতা করতে গিয়ে দলের অনেক নেতা ও মন্ত্রী-এমপি আক্রান্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির তিন জন নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির এই পরিস্থিতিতে সমগ্র পৃথিবীর সবগুলো রাষ্ট্র পর্যুদস্ত। বলা হচ্ছে চায়না খুব ভালোভাবে এটাকে মোকাবেলা করেছে। কিন্তু প্রথম দিকে চায়নাও এই ভাইরাসে অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল। যে ডাক্তার এই ভাইরাসের সন্ধান দিয়েছিলেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিসাইল-এন্টিমিসাইল কোনটিই কাজ করছেনা। তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি কোনটাই কাজে লাগছেনা, ইউরোপের দেশগুলোতে মৃত্যুর মিছিল হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ মুক্ত থাকেনি।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রথম থেকে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, একই সাথে কোন মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে, মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য তিনি ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ড. হাছান বলেন, করোনাভাইরাসের শুরুতে চট্টগ্রামে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ছিল। আমি তিনবার এসে এখানে সমন্বয় মিটিং করেছি। চট্টগ্রামের প্রশাসন ও সমস্ত মন্ত্রী এমপিরাও ছিলেন। পরিস্থিতি দু’মাস আগে যা ছিল তারচেয়ে এখন অনেক ভালো হয়েছে। সাংবাদিকদের জন্য ইউএসটিসি’র বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করলে তিনি আমাকে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রথমে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। এরপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যয়িত অর্থ থেকে আরো ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।’
মোট ৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে কারা সহায়তা পাবেন তারা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোই তালিকা করেছেন। যারা ইউনিয়নের বাইরে আছেন তাদের জন্য ডিসির সুপারিশ নিয়ে অন্তর্ভুক্তির অপশন রাখা হয়েছে। প্রথম দফায় ১ হাজার ৫’শ সাংবাদিককে এই সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রাম থেকে ২৫০ জন সাংবাদিক সহায়তা পাচ্ছেন। এবারে যারা বাদ যাবেন, তারা পরবর্তিতে পাবেন বলে জানান তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তথ্য সচিব দুই মামলাতেই আসামী। প্রথম মামলা করা হলো তথ্য মন্ত্রণালয় এটা করার অধিকার রাখেনা। পরবর্তীতে করা হলো পূর্বের মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এটা অগ্রবর্তী করা যাবেনা। এটা ঘোষণা করাই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। পত্রিকার সম্পাদক-মালিক পক্ষ নবম ওয়েজ বোর্ডের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেভাবে এগিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল সেভাবে আসেননি, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
চাকুরিজীবীকে শুধু চাকুরিজীবী নয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে বিভিন্ন মিডিয়ার মালিক পক্ষকে প্রথম থেকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলাম যাতে কোন সাংবাদিককে চাকুরিচ্যুত করা না হয় এবং পাওনা যাতে পরিশোধ করা হয়। এতদসত্ত্বেও যেখানে প্রধানমন্ত্রী মানবিকতার উদাহরণ দিয়েছেন, সেখানে অনেক জায়গা থেকে অনেকে মানবিকতা দেখাতে পারেননি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী প্রমূখ।
চট্টগ্রাম, ৩ জুলাই, ২০২০ (বাসস) :