সিলেটে ব্রিটিশ তরুণীকে অপহরণ, ফোর্সড ম্যারেজে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা

  • আপডেট টাইম : October 13 2020, 18:56
  • 688 বার পঠিত
সিলেটে ব্রিটিশ তরুণীকে অপহরণ, ফোর্সড ম্যারেজে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: গত ৩ অক্টোবর গোলাপগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর ড্রিমল্যান্ড ওয়ার্টার পার্কের কার রাইডে চলন্ত অবস্থায় আহত হওয়া তরুণী মুনতাহা আক্তার সামিয়া (১৯) কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন সামিয়ার মা রাজমিন করিম। তারা উভয়ে ২০১৬ সালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যাবৎ তারা লন্ডনে বসবাস করে আসছেন। তারা ব্রিটিশ রেসিডেন্স কার্ড হোল্ডার নাগরিক।
সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এসএমপি’র শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে রাজমিন করিম এর দাখিলকৃত লিখিত অভিযোগ সহ সামিয়ার আপন স্বজন ও মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসে।
সামিয়ার মা রাজমিন করিম এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনির একমাত্র মেয়ে সামিয়াকে ৫ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে সঙ্গে নিয়ে উন্নত জীবন-যাপনের আশায় লন্ডন চলে যান। লন্ডনে থেকে অনেক কষ্ট করে তারা সেখানের নাগরিক হন। গত ৩১ জুলাই কাতার এয়ারওয়েজ যোগে মা-মেয়ে লন্ডন থেকে ফ্লাইট করে ঢাকা হয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌছেন। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা বিয়ানীবাজার উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে অটোরিক্সা (সিএনজি) চালক রুহুল আলম উরফে জাকারিয়া (৩৪) তাদেরকে গ্রহণ করে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সিলেট নগরীর উপশহর ই-ব্লকের ৪নং রোর্ডের ১৫১নং ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। ওই বাসাটি জাকারিয়াই ভাড়া করে রেখেছিলো।
৩১ জুলাই রাজমিন করিম ও মেয়ে সামিয়া বাসায় প্রবেশ করে দেখতে পান জাকারিয়ার মা, বোন, ভাই সহ বেশ কয়েকজন লোক বাসায় আছেন। তখন রাজমিন করিম বলেন, এতো লোকজন এই বাসায় কেন? একথা বলার পর জাকারিয়া ও তার স্বজনরা রাজমিন করিমকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলে আর তাদেরকে বাসার ভেতর থেকে বের হতে দেয়নি।
গত ৫ আগস্টের মধ্যে জাকারিয়া ও তার আপনজন সংঘবদ্ধ হয়ে রাজমিন করিমের ভ্যানেটি ব্যাগে থাকা লন্ডনের একটি ব্যাংকের ডেভিট কার্ড, নগদ ৭শত পাউন্ড, নগদ ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা, ব্রিটিশ টেলিকমের ও এদেশী মোবাইল সিম, স্বর্ণালংকার, মুনতাহা আক্তার সামিয়ার নামে ব্রিটিশ সরকার ইস্যুকৃত রেসিডেন্ট নাগরিক কার্ড, সামিয়ার ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট ও বিমান টিকেট সহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।
গত ৭ আগস্ট তারিখে জাকারিয়ার সাথে সামিয়াকে বিবাহ দেয়ার জন্য রাজমিন করিমের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে জাকারিয়া। রাজমিন করিম তার মেয়েকে জাকারিয়ার সাথে বিবাহ দিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এতে জাকারিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে রাজমিন করিমের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
গত ৬ আগস্ট জাকারিয়া তার মা, বোন, ভাই সংঘবদ্ধ হয়ে রাজমিন করিমকে বাসায় জিম্মি রেখে একমাত্র মেয়ে সামিয়াকে কৌশলে জিন্দাবাজারে মার্কেট করে দিবে বলে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায়। এরপর সামিয়াকে জাকারিয়া বাসায় তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে সামিয়াকে জাকারিয়া বাসা থেকে বের করে অন্যত্র নেয়ার সময় রাজমিন করিমকে বাসার ভেতর রেখে দরজার বাহির দিকে তালা মেরে তারা চলে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার পর রাজমিন করিম অন্যের সাহায্যে খবর দিয়ে সিলেট নগরীতে বসবাসরত ৩ জন আপন স্বজনকে ওই বাসায় ডেকে আনেন। তারা জাকারিয়ার ছোট ভাইকে ফোন দিলে সে বাসার দরজার তালা খোলে দেয়ার পর সিম ফেরত দেয়। ওই সময় স্বজনরাও রাজমিন করিমের কাছে যান এবং ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে জাকারিয়ার নাম্বারে ফোন দিয়ে অনুরোধ করেন সামিয়াকে বাসায় নিয়ে আসতে। এভাবে রাত ১২টা পার হয়ে যায়। গভীর রাতে স্বজনরা পুনরায় অনুরোধ করে জাকারিয়ার ফোনে কথাবার্তা বললে, সে হুমকী দিয়ে বলে, তোমরা এ বাসায় কেন এসেছে। এখনই চলে যাও। নতুবা রাজমিন করিমসহ তোমাদের সবাইকে প্রাণে মেরে ফেলবো। তখন রাজমিন করিম কেঁদে ফেলে তাকে উদ্ধার এবং নিরাপদে স্বজনদের বাসায় আশ্রয় দেয়ার কথা বললে ওই ৩জন স্বজন তাকে উদ্ধার করে সেখান থেকে নিয়ে যান।
সামিয়া লন্ডনের কনসেপ্ট কলেজের এ লেভেল পাস হওয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। এ লেভেল পরীক্ষায় সামিয়া কৃতকার্য হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে মেডেল উপহার দেন। আগামী বছর সামিয়া ইংল্যান্ডের নামকরা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা ছিলো।
৭ আগস্ট জাকারিয়া সকলের অজ্ঞাতে ওই বাসায় পুনরায় এসে তার আপন স্বজনদের নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় লন্ডন থেকে আনা রাজমিন করিম ও সামিয়ার ব্যক্তিগত লাগেজ সহ জিনিসপত্র নিয়ে জাকারিয়া চলে যায়।
৬ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস পেরিয়ে অক্টোবরের ৩ তারিখের মধ্যে সামিয়াকে জাকারিয়া জোরপূর্বক জিম্মি করে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে অজ্ঞাত স্থানে রেখে সামিয়াকে আর মায়ের মুখ দেখায়নি।
রাজমিন করিম বলেন, এটা বিয়ে জোরপূর্বক, কিডন্যাপের মাধ্যমে ফোর্সড ম্যারেজ। এরপর থেকে রাজমিন করিম নিরাপত্তা হীনতায় ভোগেন।
বিগত ১৫ আগস্ট রাজমিন করিম জাকারিয়া ও তার স্বজন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এসএমপি শাহপরান থানায় একটি লিখিত অভিযক

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
October 2020
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
0Shares