সিলেটে গ্যাং কালচার অপরাধে জড়াচ্ছে তরুণ তরুণীরা

  • আপডেট টাইম : May 03 2021, 11:38
  • 668 বার পঠিত
সিলেটে গ্যাং কালচার অপরাধে জড়াচ্ছে তরুণ তরুণীরা

 

আব্দুর রহমান হীরা।। 
সিলেটে গ্যাং কালচার রোধে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং, আশ্রয়দাতাদের নামের তালিকা করা হচ্ছে।কিশোরা- ঘরে বসেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ হয়। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন গ্রুপে বসে বসে পরিকল্পনা করে ‘গ্যাং কালচার’-এর। কোথায় কখন আড্ডা হবে, কতোগুলো বাইক/গাড়ি থাকবে, কোন এলাকায় অবস্থান নিতে হবে। এমনকি কোথায় বসে কোন ধরনের মাদক গ্রহণ করবে, তাও ঠিক করে ফেলা হচ্ছে ঘরে বসে। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়, খুবই নিরাপদে এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কিশোররা। ফলে ধরন পাল্টে, আগের চেয়েও বেশি সংঘবদ্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা। আর এসব পরিকল্পনাসহ সবকিছু লুকিয়ে থাকে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ইনবক্সে। এজন্য অভিভাবকরা মোটেও টের পান না।

কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য::জানান স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় সময় পারকরতে আমারা সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন গ্রুপে বসে বসে পরিকল্পনা করে একত্রিত হই আড্ডা দিতে এতে দুর্ষের কি আছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কেউ স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে, কেউ বা এখনো পড়ছে।
লাইকি,  টিকটক,বিগো,গ্রুপযুক্ত সিন্ডিকেট’র মাধ্যে তরুণ তরুণীরা ভিবিন্ন ভাবে অপরাধে জড়াছে।
এদের সাথে যোগ হচ্ছে কিশোর বয়সের ছিনতাই ও মাদক মামলার আসামীরাও। এলাকায় আড্ডা আর খেলার ছলে অনেক কিশোরই জড়িয়ে পড়ছে গ্যাং কালচারে। এরপর জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবন, মাদক কারবারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে। প্রকাশ্যে রাস্তায় গুলি করতেও তাদের হাত কাঁপছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং পরিবারের নজরদারি ও মূল্যবোধ দিয়ে এই কিশোর অপরাধ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এই অলস সময়ে কিশোর-তরুণদের রখবে কে?
পৃথিবীজুড়ে চলছে করোনার ঢেউ। জীবন-জীবিকা নিয়ে সাধারণ মানুষ যখন চরম উৎকণ্ঠায়, তখন অপরাধের নানা ফাঁক ফোকরে পা দিচ্ছে বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীরা।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ বখাটে, কিশোর গ্যাং ও ইভটিজারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। আবার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেও নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারী সিলেটে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে রাজু দাস (২২) নামে এক যুবক খুন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর হাওলদারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
একই মাসের ১৮ ফেব্রুয়ারী, সিলেটের খাদিমপাড়ায় মা, বোন ও ভাইকে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে আবাদ বুলবুলের ১৭ বছরের এক কিশোর।
এছাড়া ২৩ জানুয়ারী শাহপরান থানার খাদিমনগরের একটি ডোবা থেকে ছুরিকাঘাতে নিহত অজ্ঞাত এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
্এদিকে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর সিলেটের জাফলংয়ে ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের জন্য এক কিশোর ট্যুরিস্ট গাইডকে খুন হয়েছে।
২৩ নভেম্বর নগরের পীরমহল্লা এলাকায় কুস্তি খেলতে রাজি না হওয়ায় মো. লিটন মিয়া (১৪) নামে এক কিশোরকে লাথি ও কিল-ঘুষি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একই বছর ২ সেপ্টেম্বর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শগরতলীতে ছুরিকাঘাতে তানভীর আহমদ (১৭) নামে এক কিশোর খুন হয়েছে। একটি অংশ জড়িয়ে পড়ছে নানা অসামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। এতে সিলেটে বেড়েই চলছে কিশোর অপরাধ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় আসায় সুবিধা যেমন হয়েছে, অসুবিধাও কম নয়। নিজের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে অনেকেই একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দিচ্ছেন অপরাধীদের হাতে। এছাড়া তারা অনলাইন ঘেঁটে শুধু শিক্ষামূলক কনটেন্টই দেখছে, এমন না। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে যায় না এমন অনেক অনৈতিক কনটেন্টও সার্চ করছে। পুলিশের সাইবার ইউনিট বলছে, এমন ভুক্তভোগীর বেশিরভাগই উঠতি বয়সী তরুণী। আর এসব অপরাধীরাও বেশিরভাগ বয়সে তরুণ। ফলে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়, ভার্চুয়াল জগতে একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ছড়ানোয় তরুণীর আত্মহত্যা।
অপরাধ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতেই লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই, এর মধ্যে অনলাইনে ক্লাসের জন্য এখন তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের হাতে শোভা পাচ্ছে অত্যাধুনিক অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। এ নতুন ডিভাইসের কারণে উঠতি বয়সের ছেলেদের ঘরে আটকে রাখা আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ছে। মোবাইল হাতে পেয়ে কেউ কেউ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অশ্লীল ভিডিও দেখছে। ফেসবুকের সুবাদে জড়িয়ে পড়ছে প্রেমে। কেউ একধাপ এগিয়ে প্রেমিক প্রেমিকা নিয়ে পালিয়ে বিয়ে-শাদি করে ফেলছে। কোথাও বা ছোট-বড় কিশোর গ্যাং সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
অনুসন্ধান বলছে, করোনাকালে কিশোরদের মধ্যেও বেড়েছে অপরাধ প্রবণতাসহ ‘গ্যাং কালচার’র আসক্তি। লকডাউনে অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে শিশু-কিশোরদের অপরাধের ধরনও অনেকটা বদলেছে। এ সময় অপরাধের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রযুক্তি। অলস সময়ে এই বয়সী কিশোরদের যৌনতার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তাদের এই আগ্রহের জায়গায় প্রযুক্তি সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
May 2021
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
0Shares