🔻ইচ্ছা মতো ভাড়া আদায়।
🔻সিলেটে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাই নয়। ভাড়া নৈরাজ্য চালাচ্ছে মাইক্রোবাস ও কার চালকরা।
🔻নেই পুলিশের তদারকি।
সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মদীনা মার্কেট থেকে ওসমানী মেডিকেলের আসেন অরমুজ আলী তিনি বলে কিতা খাইমু সিএনজিরও অত ভাড়া মরার সময় অইগেছে!
মদীনা মার্কেট থেকে ওসমানী মেডিকেলের সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া ছিল ৫ টাকা। সেখানে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা। ৩ জন যাত্রী বহনের কথা থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে ৫ জনও। এ নিয়ে ভাড়া নিয়ে চালকের সাথে যাত্রীদের বাকবিতন্ডা নিত্যনৈমত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন চিত্র বন্দরবাজার, আম্বরখানা সহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বন্দরবাজার থেকে টুকেরবাজারের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। লকডাউনের আগে হঠাৎ করেই ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারিত করেন সিএনজি অটোরিক্সা স্ট্যান্ড ম্যানেজাররা। সরকারী কোন নিয়মনীতি না মেনে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কোন আলাপ আলোচনা না করেই এই ভাড়া নির্ধারণ করে তারা। এই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী রাতে ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার জের ধরে বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্টে সিএনজি চালকের হাতে খুন অগ্রনী ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমদ। যা নিয়ে গোটা সিলেটে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। চলমান লকডাউনে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন তারা। লকডাউনে বন্দরবাজার থেকে টুকেরবাজারের ভাড়া নির্ধারণ করেন ৩৫ টাকা। যা নিয়ে সারাদিনই যাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন চালকেরা। অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও ৩ জন যাত্রী বহনের কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ৫ জন যাত্রী বহন করেন চালকরা। দিনের বেলায় পুলিশ টহল থাকায় কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩ জন যাত্রী বহন করলেও বিকেল হতেই শুরু হয় ৫ জন বহন করা। এই অবস্থা চলতে থাকে রাত্রি পর্যন্ত।
আম্বরখানা থেকে টুকেরবাজার পূর্বের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। লকডাউনে ভাড়া নেয়া হয় ২৫ টাকা। দিনের বেলায় ৩ জন যাত্রী নিলেও সন্ধ্যায় পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ভাড়া ২৫ টাকা করে নিলেও যাত্রী বহন করে ৫ জন। এমন দৃশ্য বন্দরবাজার টু বটেশ^র, বন্দরবাজার টু দক্ষিণ সুরমা, আম্বরখানা টু বিমানবন্দর, আম্বরখানা টু টিলাগড় সহ নগরীর বিভিন্ন রুটে।
শুধু সিএনজি চালিত অটোরিক্সাই নয়। ভাড়া নৈরাজ্য চালাচ্ছে মাইক্রোবাস ও কার চালকরা। সিলেটে আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে মানুষকে যেতে হচ্ছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। সেইক্ষেত্রে একমাত্র বাহন হচ্ছে মাইক্রোবাস ও কার।
সিলেট কুমারগাও বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেখানেই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে যাত্রী সংগ্রহে ব্যাস্ত কার ও মাইক্রো চালক। সিলেট টু সুনামগঞ্জের বাস ভাড়া ১৬০ টাকা হলেও যাত্রী প্রতি তারা ভাড়া নিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। অর্ধেক যাত্রী বহনের নিয়ম থাকলেও বহন করা হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। বিকল্প বাহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। শনিবার রাত ৯টার সময় চৌহাট্রা সিভিল সার্জন অফিসের সামনে থেকে কারযোগে সুনামগঞ্জে যাচ্ছিলেন কলেজ ছাত্র বকুল মিয়া। তার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। চালকের কথা একটাই এর কম ভাড়ায় সে যাত্রী নিতে পারবেনা। একটি কারে ৩ জন যাত্রী বহন করার কথা থাকলেও ৪ জন যাত্রী বহন করা হয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত করে গন্তব্যে পৌছান ঐ কলেজ ছাত্র। এমন অবস্থা সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট আসার পথে। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের সামনে লাইন ধরে রাখা হয়েছে মাইক্রোবাস ও কার। সিলেটগামী যাত্রী প্রতি নেয়া হচ্ছে মাইক্রোবাসে সাড়ে আড়াইশ থেকে তিনশো আর কারযোগে তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো টাকা। নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই চলাচল করছেন যাত্রী সাধারণ।
একই চিত্র নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্তর, কিনব্রিজের মোড়, কদমতলী টার্মিনালের। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জগামী যাত্রীরা একমাত্র পরিবহন হিসেবে মাইক্রোবাস ও কার যোগে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই ছুটছেন গন্তব্যের দিকে। একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা দুটোর যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে যাত্রীসেবা।
তাদের হাতে এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রী সাধারণ। দিন-দিন চালকরা তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বৃদ্ধি করছে। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারনেই চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কদমতলি থেকে জকিগঞ্জের ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা হলেও জনপ্রতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ৩ জনের স্থলে যাত্রী বহন করা হচ্ছে ৫ জন। কেউ প্রতিবাদ করলে সিএনজি চালকরা খারাপ আচরণ করেন। এভাবেই প্রতিনিয়ত সিলেটে অটোরিকশা চালকদের কাছে নাজেহাল হচ্ছেন নিরীহ যাত্রী সাধারণ।
বন্দরবাজার টু টুকেরবাজারমূখী যাত্রী আবুবকর সিদ্দিক বলেন, আমি শনিবার সন্ধ্যা ৮টার দিকে টুকেরবাজারগামী সিএনজি অটোরিক্সায় উঠলে চালক আমার কাছে ৩৫ টাকা ভাড়া দাবী করেন এবং ৩ জন যাত্রী বহন করবে বলে জানান। আমিও সেই ভাড়ায় সিএনজিতে উঠে পড়ি। সিএনজি ছাড়ার পূর্বমুহুর্তে সাথে সাথেই চালক আরো ২ জন যাত্রী উঠায়। আমি প্রতিবাদ করলে চালক আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। তার সাথে বিতর্কে অন্য সিএনজি চালকও যোগ দেয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমি নেমে অন্য সিএনজিতে গন্তব্যে পৌছি। এব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি।
করোনার সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন। এতে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন অর্থাৎ বড় গাড়ি। তবুও জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে বের হতে হচ্ছে রাস্তায়। ভীড় বাড়ছেন ছোট যানবাহগুলোতে। এই অবস্থায় ছোট গাড়িতে বাড়ছে বড় বিড়ম্বনা। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করলেও অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়ছে করোনা ঝুঁকি।
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনকে পুঁজি করে সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকরা। করোনা দুর্যোগের এই কঠিন সময়ে ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রী সাধারণ অতিষ্ঠ। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের দাবিকৃত ভাড়া না দিলে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। তাদের লাঞ্ছনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না মহিলা যাত্রীরাও। মান সম্মানের ভয়ে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া গুনছেন অনেকটা নিরবে। এমন অবস্থায় কোথাও নেই সরকারী নজরদারি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট জেলা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে আলাপকালে বিআরটিএ সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশলী) মোঃ সানাউল হক বলেন, সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ সিলেটে সিএনজি অটোরিক্সা যেভাবে গণপরিবহনের মতো সার্ভিস দিচ্ছে সেই সিস্টেমটাই অবৈধ। অটোরিক্সা চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যাত্রীকে তার বাড়ীতে দিয়ে আসার কথা।
কিন্তু এর বিপরীতে সিলেট জুড়ে কয়েকজন চালক কিংবা শ্রমিক ইউনিয়ন মিলে ইচ্চেমতো একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দিলো আর জনগণ সেভাবেই চলাচল করছে। যার ফলে যাত্রী সেবা বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাক-বিতন্ডার পাশাপাশি সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। এ থেকে মুক্তি পেতে সিএনজি অটোরিক্সার বিপরীতে নগর বাস সহ গণপরিবহনে চলাচল বাড়ানো উচিত। অন্যথায় সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের নৈরাজ্যের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়।