সোমবার (৩ মে) মধ্যরাত পর্যন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির উচ্চপর্যায়ে কয়েকজন ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিন মধ্যরাতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁর চিকিৎসকেরা বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই। আর একইসঙ্গে পারিবারিক ও দলীয়ভাবেও দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চলতি এপ্রিলে আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (৩) মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দিয়েছি। সেগুলোর প্রতিবেদন আসার পর চিকিৎসকেরা পর্যালোচনা করবেন। এর আগে বলার কিছু নেই।’
এর আগে, সোমবার ভোর থেকে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলে জানান জাহিদ হোসেন।
তিনি জানান, দেশের বাইরের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গেও নিয়মিত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একইসঙ্গে তার পুত্রবধূ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমানও পুরো কার্যক্রমের খোঁজখবর করছেন।
খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা পুরোপুরি তার পরিবারের বিষয়। আমি এটা বলতে পারবো না। তবে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে পরিবার থেকে দেড় বছর আগে থেকে বলা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পুরো খরচ তারা বহন করবে। এটা তো অনেক আগে থেকেই তার পরিবারের চাওয়া।’
বেগম জিয়ার সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নে এই চিকিৎসক বলেন, কেমন বোধ করছেন, এসব একটু জানতে চাওয়া হয়। তার মনোবল কেমন রয়েছে, জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, মনোবল ভালো আছে।
প্রস্তুতি সম্পন্ন, অপেক্ষা অনুমতির
বিএনপির উচ্চপযার্য়ের একাধিক নেতা জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে সোমবার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করা হয়েছে। দেশের একটি খ্যাতনামা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এ প্রক্রিয়াটি বেশ এগিয়ে রয়েছে।
এছাড়া পারিবারিকভাবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারা যাবেন, এ বিষয়টিও ঠিক করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার পরিবারের কেউ উদ্ধৃত হতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে ডা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আর এখন নতুন সিনারিও আর সারা পৃথিবী জুড়ে করোনা মহামারির এই বাস্তবতায় বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।’
যদিও খালেদা জিয়াকে কোন দেশে নিয়ে যাওয়া হবে, এ নিয়ে কেউই মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে তার ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার লন্ডনে থাকায় সেখানে নেওয়ার বিষয়টিই বেশি আলোচনায়। নাম প্রকাশে একাধিক নেতা এটাও ধারণা করছেন, সিঙ্গাপুর বা ব্যাংককেও নেওয়া হতে পারে বেশি জটিলতা থাকলে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে সরকার প্রধানের কাছে আবেদনের পর বিষয়টি নিয়ে অনুমতির অপেক্ষা করছে বিএনপি। দলটির প্রভাবশালী একাধিক দায়িত্বশীল জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের ওপর নির্ভর করছে। ইতোমধ্যেই সরকার প্রধানের কাছে পারিবারিকভাবে আবেদন করা হয়েছে। এখন আইনিভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদনের পর আইনি প্রক্রিয়া দেখভাল করে মতামত দেবে আইন মন্ত্রণালয়। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পরই ফাইনালি বিদেশ যেতে পারবেন খালেদা জিয়া।
দলীয় সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আবেদনের পর কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় সোমবার বিএনপির মহাসচিব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। বিশেষ করে, সোমবার বিকালে খালেদা জিয়াকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করার বিষয়টি অবহিত করেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরদিন বিএনপি প্রধানের চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। গতকাল সোমবার বিকালে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
এরআগে, গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওইদিন বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সোমবার রাতে চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ম্যাডামের অবস্থা ন্যাচারাল আছেন। হাইপ্রোফাইল রাজনীতিক হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিনি এখন ভালো আছেন, অক্সিজেন নিচ্ছেন। চিকিৎসকেরা দেখভালো করছেন।’
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান খালেদা জিয়া। সেখান থেকে এক মাসের মধ্যেই ফেরার কথা থাকলেও চিকিৎসায় সময় লাগায় হওয়ায় দেশে ফিরতে দেরি হয়। ওই বছর ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।