দেশটিভি ডেস্ক।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের আলোচনার মধ্যেও ইসরাইলের আগ্রাসন থামছেনা ফিলিস্তিনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় শতাধিকের বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বিমানবাহিনীর পাশাপাশি বোমাহামলায় অংশ নিয়েছে ইসরাইলের নৌবাহিনী। বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, হামাসের রকেট উৎক্ষেপণের বেশ কয়েকটি স্থাপনা এবং দুটি অস্ত্র তৈরির কারাখানায় হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া হামাসের কয়েকটি মাটির নিচের সুড়ঙ্গে হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি হামাসের কমান্ডারদের বাড়িগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা চালানো হয়। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার একাদশ তম দিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩০ জনে। এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোট নিহতদের মধ্যে ৬৫ জন শিশু ও ৩৯ জন নারী রয়েছেন। এদিকে গতকালের হামলায় গাজার এক পঙ্গু লোক, তার গর্ভবতী স্ত্রী ও তিন বছর বয়স্ক কন্যা নিহত হয়েছেন। গতকাল ইসরাইলী বাহিনীর হামলার সময় হুইলচেয়ারে বসেছিলেন পঙ্গু ৩৩ বছরের ইয়াদ সালেহ। নিজের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে তার ঘরে। মুহূর্তেই বদলে যায় সবকিছু। প্রাণ যায় ইয়াদ সালেহ, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, তাঁদের তিন বছরের কন্যা ও ভাইয়ের। লন্ডভন্ড হয়ে যায় সবকিছু।
বিস্ফোরণের পর ইয়াদ সালেহর লিভিং রুমের সবকিছু ভেঙেচুরে যায়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়েছিল ছোট্ট মেয়েটির দুমড়েমুচড়ে যাওয়া লাল রঙের খেলনা সাইকেল। মধ্যাহ্নভোজের জন্য ফ্রিজ থেকে খাবার বের করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। ভেঙে গেছে সেই ফ্রিজ। ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে টমেটো ভরা বাটিটি।
দেইর-এল-বালা এলাকায় সাগরতীরে ছিল ইয়াদ সালেহর বাড়ি। বাড়িটির সব সদস্যের মরদেহ এখন মর্গে। ভাই ওমর সালেহ (৩১) জানান, ইয়াদ সালেহ ১৪ বছর ধরে হাঁটতে পারতেন না। তিনি কোনো যুদ্ধ বা সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই কী করেছিল? তিনি তো হুইলচেয়ারে বসা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মেয়ে কী করেছে? তাঁর স্ত্রী কী করেছে। তাঁরা তো মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করছিল।’
ওমর সালেহ আরও বলেন, তাঁর ভাই ইয়াদ সালেহ বেকার। তিনি মা ও তিন ভাইয়ের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তাঁরা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
গাজার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আল রশিদ বলেন, ‘ঘরের মধ্যে নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যা করা বড় অপরাধ। আর কত মৃত্যু হলে বিশ্বের বিবেক জেগে উঠবে?’
শুধু ইয়াদ সালেহ নন, এ রকম হামলার শিকার হতে হয়েছে অনেক গাজাবাসীকে। ৫৮ বছরের উম ইয়াদের বাড়িতে চালানো হামলায় তাঁর ছেলে নিহত হয়। বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান উম ইয়াদ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ১০ মে থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় অনেকটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা। মাইলের পর মাইল কেবল ধ্বংসের বিভিষিকাময় দৃশ্য।
তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি, গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাসের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে ২ শিশুসহ নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৩ জনে। সেখানে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন।
গাজায় গৃহহীন ৭৫ হাজার, সম্পদের ক্ষতি ৩২২ মিলিয়ন ডলার : গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় গৃহহীন হয়েছেন ৭৫ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বর্তমানে গাজায় জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ৫৮টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়সমূহের সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেন, সার্বিকভাবে গাজার বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সহিংসতায় অংশ নেওয়া সকল পক্ষের উচিত চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর আগে মানবিক বিরতিতে রাজি হওয়া।
গাজায় ফিলিস্তিন সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত সেখানে ৩২২ মিলিয়নের বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে ১৮৪টি আবাসিক ভবন, বাড়ি এবং ৩৩টি মিডিয়া সেন্টার। যেগুলোর মূল্য প্রায় ৯২ মিলিয়ন ডলার।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ সিনেটর। ডেমোক্র্যাট সিনেটর জন অসোফের নেতৃত্বে সিনেটররা এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান হয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য হিল।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২৭ মে একটি বিশেষ অধিবেশন আহবান করেছে। ওআইসি ও পাকিস্তানের একটি অনুরোধের ভিত্তিতে এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।