বিশেষ প্রতিবেদক:: হৃদয় দেব নাথ। গাজী টিভি ও সারাবাংলা ডট নেট নিউজ পোর্টালের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি। সাধারণত তিনি এই প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচয় পত্র গলায় ঝুলিয়ে চলাফেরা করায় সাধারণ মানুষের কাছেও সমান পরিচিতি, তিনি সাংবাদিক। কিন্তু তার চলাফেরা নিয়ে যারা খোঁজ খবর রাখেন তাদের কাছে তিনি এক বেপরোয়া ধূর্ত মানুষ। সাংবাদিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষদের ব্লাকমেইল করে অর্থ আদায় তার কাছে নিত্য নৈমিত্ত ব্যাপার। ২০০০ সালের শুরুতে তাঁতীদল পরে যুবদলে নাম লিখিয়ে সুবিধা করতে না পেরে হৃদয় সাংবাদিকতায় না লেখায়। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যায়যায়দিন থেকে গাজী টিভিতে যোগ দিয়ে বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এমপি তার নানা-এমন পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম শুরু করতে থাকে। শত্রুতা থেকে ফায়দা লুটতে ‘শ্রীমঙ্গলে বৃট্টিশ নাগরিক ছুরিকাহত’ এমন একটি ভুয়া সংবাদ গাজী টিভিতে টেলপে সম্প্রচার করিয়ে ওই কথিত বৃট্টিশ নাগরিকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সে সময় ঢাকায় ইটালী ও রংপুরে জাপানী নাগরিক খুন হওয়ায় কয়েকটি ঘটনা ঘটে। ফলে হৃদয়ের এই সংবাদ দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তাৎক্ষনিক খোঁজ নিয়ে সংবাদটি ভূয়া প্রমানিত হওয়ায় ৪ ঘন্টার মাথায় গাজী টিভি কর্তৃপক্ষ টেলপে থেকে সংবাদটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এঘটনায় ৪ নিরাপরাধ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
হৃদয়ের বন্ধু কবি মাফি আনোয়ার। মাফি জানায়, হৃদয় নেশা করে মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে। সে একজন জঘন্য মানুষ।
২০২০ সালে মাদকের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারপিটের শিকার হয় হৃদয়। এমন প্রচার করলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিনা টাকায় মাদক গ্রহন করতে গিয়ে বিবাদে জড়িয়ে মাদক কারবারির হাতে প্রহৃত হয় হৃদয়।
অর্থ আদায়ে হৃদয়ের প্রধান টার্গেট হাইওয়ে পুলিশ। এর পাশাপাশি তদবির বানিজ্য করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে অনেককে সর্বশান্ত করার অনেক অভিযোগ এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
সাংবাকিতার আড়ালে চাঁদাবাজী তার এক ধরণের নেশা। জিটিভিতে লাইভ করার নামে কুলাউড়ার এক প্রবাসীরকাছ থেকে ১৫ হাজার নিয়ে গা ঢাকা দেয় হৃদয়। প্রথম আলোর কমলগঞ্জ প্রতিনিধি রঞ্জু মিয়ার হস্তক্ষেপে সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় হৃদয়। পাহার কেটে রিসোর্ট করার হয়েছে- এমন অভিযোগে নিজে ম্যাজিষ্ট্রেটের ভূমিকায় নামে হৃদয়। শ্রীঙ্গলের রাধানগরের এসকেডি আমার বাড়ি থেকে ২০ হাজার, প্যারাগন রিসোর্ট থেকে ১৫ হাজার, তাওসী রিসোর্ট থেকে ৬ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই এলাকায় পিতা তার ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করেছে এমন কথা বলে ওই ব্যক্তির কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবী করে হৃদয়- এমন অভিযোগ রাধানগরের মানুষের মুখে মুখে। জানা যায় এই আড়াই লাখ টাকা পরে তা ৮০ হাজারে রফা দফা হয়। হৃদয়কে টাকা দিতে জমি বিক্রি করারও উদ্যোগ নেয় ভুক্তভোগী। পরে ওই পিতা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এতে তার ফাঁসি হবে না, ফলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে টাকা দিতে অস্বীকার করে। হৃদয় টাকা না পেয়ে ১৫ মে সারাবাংলা ডট নেটে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। পুলিশি তদন্ত করে ধর্ষণের ঘটনা মিথ্যা প্রমানিত হলেও ওই চা শ্রমিক সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে পড়েন। লাউয়াছড়া এলাকায় একজন কৃষকের কাছ থেকে
১২ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে করে সেখানকার জীব বৈচিত্র রক্ষা কমিটির লোকজনদের কাছে ধৃত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
পাহাড়, প্রকৃতি ছাড়াও হৃদয়ের অবৈধ আয়ের উৎস হলো বালু।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বালুর ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ এর কথা বলে মির্জাপুর, ভুনবীর, সাতগাঁও এলকার বালু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করতে হৃদয়। প্রেসক্লাব, থানা, পুলিশ, এমনকি এসিল্যান্ড এর নাম ভাঙ্গিয়ে বালুর চাঁদা আদায় করার দু:সাহস দেখাতো হৃদয় দেবনাথ। মাজার, পতিতা, ও জুয়া থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের কথা জানা গেছে। থানা পুলিশের তদবির বাণিজ্য করতে গড়ে তোলে একটি চক্র। শহরের রুবেল ও রুপক দত্ত নামে দুই ব্যক্তি তার ডান ও বাম হাত। অভিযোগ রয়েছে, গত জুন মাসে ক্ষতিগ্রস্ত একজন ঠিকাদারের চুরি যাওয়া মালামাল পুলিশ দিয়ে উদ্ধার করে দেয়ার চুক্তি নিয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে হৃদয়। পরবর্তিতে এশিয়া টিভির রাজশাহীর বুরে্যা প্রধান শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধির সহায়তায় টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হৃদয়ের এসব অপকর্ম নিয়ে গত ৫ ও ৬ জুলাই শ্রীমঙ্গলে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে দেয়। একজন সাংবাদিকের এমন একটি পোষ্ট ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে শত শত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ঘৃনা প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর পরদিন ৭ জুলাই হৃদয় নিজে প্রধানমন্ত্রীর পদক পাচ্ছেন জানিয়ে সারাবাংলা ডট নেটের একটি লিংক পোষ্ট করে। পোষ্টে তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক পাওয়ায় নাকি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এদিকে, ১৫ জুন সারাবাংলা ডট নেট ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পদক পাচ্ছেন সাংবাদিক হৃদয়’ শীর্ষক সংবাদ জানাজানি হওয়ায় পর শ্রীমঙ্গলের সব শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। গাছ না লাগিয়েও একজন মাদকসেবীর প্রধানমন্ত্রীর পদক পাওয়ার ঘটনায় অনেকে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। সংবাদে ‘বৃক্ষ রোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় এ পুরষ্কারের জন্য তাকে মনোনীত করার কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে এই পদক প্রদানের বিরুদ্ধে শহরের পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার জনৈক কৃপেশ দত্ত এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। কৃপেশ দত্ত জানান, খোজঁ নিলে জানতে পারবেন, বৃক্ষরোপণে মৌলভীবাজার জেলা তথা শ্রীমঙ্গল উপজেলায় হৃদয় দেব নাথ নামে কোন ব্যক্তির বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। বৃক্ষপ্রেমী নয় বরং মাদকাসক্ত ও চাদাঁবাজ হিসেবে সে অধিক পরিচিত। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার থানা পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে অবগত রয়েছেন। তিনি জানান, আমার আশংকা পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে ধুর্ত হৃদয় তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করে থাকতে পারে। শ্রীমঙ্গলের শীতেশ দেব, বিকুল চক্রবর্তী, বেলাল মিয়া, বড়লেখার লেদু নার্সারি, আবুল কালামের মতো অনেক প্রকৃত বৃক্ষপ্রেমি রয়েছেন। মানবাধিকার কর্মী কৃপেশ ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, যারা কোন পুরষ্কারের আশা না করে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বনায়নে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। সমাজে এরাঁ অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে পরিচিত।
অথচ এদের বাদ দিয়ে বৃক্ষের সাথে যার বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নেই এমন এক বিতর্কিত চিহ্নিত মাদকাসক্ত ও চাদাঁবাজকে প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা দেয়া মৌলভীবাজারের সাংবাদিক সমাজসহ আপামর জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত দুঃখের, লজ্জার, বেদনার ও অবমাননার।