দেশটিভি প্রতিবেদক।।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন,হাসপাতালের আউটডোরের বিল্ডিংয়ে আরো দুইশ’ শয্যার একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড করতে প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে সেখানে বেডসহ আনুষাঙ্গিক সবকিছু নেয়া হয়েছে।
কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিলেই আরো ৪শ’ করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
তিনি শামসুদ্দিনের করোনার চিকিৎসা সংকোচিত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন,একইসঙ্গে ওসমানীতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সম্বলিত ২০০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড চালুর প্রস্তাবনার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩টি ওয়ার্ডে এখন প্রায় আড়াইশ’ করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া একটি আইসিইউ ওয়ার্ডও রোগীতে ভর্তি। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে ওয়ার্ড বাড়িয়ে করোনা রোগী ভর্তি করছে।
সিলেটে করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেন সংকট যাতে না হয় সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ চালু রাখার বিষয়টি আশ্বস্ত করেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। রোগী বাড়ার ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে লকডাউন কার্যকর করার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সিলেটে ১০টি স্থানে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করার উপর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ করোনা চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি জানান জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম। সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
জানান, পরিস্থিতি ভালো ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চিন্তার বিষয়। এজন্য বৈঠকে উপস্থিত থাকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা লকডাউন কার্যকরের দিকে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লকডাউন কার্যকর না হওয়ার পেছনে প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তিনি জানান, পুলিশসহ মাঠে থাকা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেবল রাজপথেই কড়াকড়ি আরোপ করেন। কিন্তু পাড়া-মহল্লায় মানা হচ্ছে না লকডাউন। মহল্লার ভেতরে আড্ডা দেয়া ছাড়াও মানুষের চলাচল বেড়েছে। লকডাউন কার্যকর না হওয়ার কারণে ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মেয়র।
তবে, লকডাউন পালন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান। যতোটুকু সম্ভব ছাড় দিয়ে হলেও লকডাউন পালন করার বিষয়টি জানান তিনি। কারণ, লকডাউনে মানুষের জীবিকার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সামনে কোরবানির ঈদ। লকডাউনে বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সবদিক বিবেচনা করেই লকডাউন পালনে সহনীয় থাকার কথা বলেন তিনি।
তবে, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ওসমানী হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওসমানীতে বাইরের করোনা রোগীদের অনেক সময় ভর্তি করা হয় না। তিনি একজন রোগীকে তদবির করে ওসমানীতে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেই রোগী পরে জানিয়েছেন, ওসমানী থেকে শামসুদ্দিনেই করোনার ভালো চিকিৎসা করা হয়। এজন্য তিনি করোনা রোগীদের চিকিৎসার মান বাড়ানোর উপর তাগিদ দেন।
অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। সিলেটে রোগী বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা করেছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে বৈঠকে স্প্রেক্টার প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করা হয়। জেলা প্রশাসকের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে স্প্রেক্টার প্রতিনিধি আশ্বস্ত করেছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে যখন যতোটুকু প্রয়োজন ততোটুকু অক্সিজেন তারা সরবরাহ করবেন।
অক্সিজেনের যাতে সংকট না হয় সেদিকে তার প্রতিষ্ঠান সিলেটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, আগামীতেও দেবে। চাহিদা বাড়লে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও বাড়ানো হবে। বৈঠকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে উপজেলা পর্যায়ে অনেক ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। এখন যেহেতু গ্রামেও করোনার বিস্তৃতি ঘটেছে এ কারণে উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের আবার উপজেলায় পাঠিয়ে দেয়া হবে।
আর জেলা সদরে যেসব ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে সেগুলোয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা চালানো হবে। এই তালিকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকায় প্রেরণের কথা জানান প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ মোকাবিলার পাশাপাশি প্রতিরোধের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলা করতে হলে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এখন দেশে টিকার কোনো সংকট নেই। আরো টিকা আসছে।
গণটিকা কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে। সিলেটে যাতে আরো ১০টি টিকা সেন্টার চালু করে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ টিকা দেয়া যায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসন ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। সিলেটে চাহিদামতো টিকা পাঠানোর বিষয়টিও আশ্বস্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।