স্টাফ রিপোর্টার :: চোরের মুখে রাম নাম। বৃহত্তর জৈন্তা সিএনজি মালিক সমবায় সমিতির সকল সদস্যদের নিয়ে জাফলং মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে এক জরুরী সভা করেছেন সিলেটের আলোচিত সিএনজির টোকেন বিক্রেতা নুরুল হক।
বৃহত্তর জৈন্তা সিএনজি মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং ৭০৭ এর সদস্য ও ৫নং ফতেহপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুল হকের সভাপতিত্বে ও খলিল আহমদের পরিচালনায় সোমবার ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় এ সভা অনুষ্টিত হয়।
এ সময় নুরুল হক বলেন, পুলিশ তো সব কিছু ধরতে পারে না৷ চাঁদাবাজির কৌশলে যে পরিবর্তন এসেছে তারা সেটা হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি৷ আর ২৪ ঘণ্টাতো পুলিশের পক্ষে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়৷ চাঁদাবাজির ব্যানার পরিবর্তন হয়েছে৷ জায়গা বদল হয়েছে৷ ইদানিং কিছু মাদক সেবনকারী চাদাবাজরা হরিপুরের করিশের ব্রিজের সামনে চলন্ত সিএনজি চালিত অটোরিকশা থামিয়ে চাদা উত্তলন করছে। চালকরা চাদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে মারধরো করা হচ্ছে। তাই এদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
শীর্ষ টোকেন বিক্রেতা নুরুলের এমন কথা বার্তায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে হাসাহাসি শুরু হয়েছে। চোর বলে চুরি বন্ধের কথা। সিএনজি থেকে চাঁদা আদায় না করলে টুকেন বাণিজ্য করে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ হাতিয়ে নিচ্ছে নুরুল। তিনি নিজে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের উপদেষ্টা। সেই উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে দিন দিন তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
টোকেন নুরুল এসপির নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সড়কে প্রায় তিন হাজার অবৈধ রেজিস্ট্রেশন বিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেদারছে চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযানে দু’চারটি নম্বরবিহীন অটোরিক্সা আটক হলেও অদৃশ্য কারণে অভিযানগুলো থেমে যায়! ফলে এই তিন সড়কে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা চলাচলে বাধা থাকছে না কোথাও।
সরেজমিন অনুসন্ধান নামে টিম। উটে আসে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার তিন সড়কের টোকেন বাণিজ্যের প্রদান নুরুলসহ সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম।
জানা গেছে, এই তিন সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশী। আর অবৈধ গাড়িগুলো চলছে বিশেষ টোকেন’র মাধ্যমে। টোকেন বাণিজ্য করে মাসে লাখ লাখ ও বছরে কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে নুরুল সিন্ডিকেট। অবৈধ এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে সাহস যেন কারই নেই!
টোকেন সিন্ডিকেট প্রদানের নাম নুরুল হক উরফে টোকেন নুরুল। সে জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেহপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বালিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মনাফের পুত্র। এই প্রদানের ইশারায় এই তিন সড়কে দীর্ঘদিন দিন থেকে চলছে নম্বরবিহীন অটোরিক্সা। পরিচিতি শুধু টোকেন। তবে, টোকেন নুরুল বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের নাম।
জানা যায়, এই সড়কগুলোতে রেজিস্টেশনবিহীন অটোরিক্সা চলতে প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সাকে প্রতি মাসে কিনতে হয় ৫শ’ থেকে ১৫শ’ টাকার টোকেন। আদায়কৃত এই চাঁদা থেকে নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশনবিহীন অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা চলাচলের জন্য বিআরটিএ এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করা হয়ে থাকে বলে বিশ্বস্থ একটি সূত্র তা নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টোকেন বাণিজ্যের মূলহোতা নুরুল হক ও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের কয়েকজন মিলে তাদের বড় একটি সিন্ডিকেট। এই তিন উপজেলার সব ক’টি সড়কের নিয়ন্ত্রকরা রেজিস্টেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা (অনটেষ্ট) গাড়িতে টোকেন লাগিয়ে দিলে সেটি চলাচলের জন্য বৈধ হয়ে যায়! সিএনজি অটোরিক্সা তাদের মাধ্যমে চলাচলে প্রথমে এককালীন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সার জন্য একটি টোকেন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টোকেন অটোরিক্সার সামনের গ্লাসে লাগিয়ে দিলে গাড়িগুলো সড়কে চলতে আর কোনো অসুবিধা থাকেনা। এই উপজেলাগুলোতে এমন অটোরিক্সার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার যা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।