এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণের ফাঁদ

  • আপডেট টাইম : October 01 2020, 06:10
  • 651 বার পঠিত
এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণের ফাঁদ

বিশাল জায়গা জুড়ে সিলেটের এমসি কলেজের অবস্থান। তবে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ধর্ষণের পর গঠিত তদন্ত কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমসি কলেজের পেছন দিকে মন্দিরের টিলা। নির্জন টিলাটি। যারা এমসি’র ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান তারা এক সময় ঘুরে ঘুরে টিলার কাছে চলে যান। আর ওখানে গেলেই ঘটতো বিপত্তি। ছাত্রলীগের সাইফুরের নেতৃত্বে ওই চক্রের সদস্যরা মন্দিরের টিলায় বসে আড্ডা দিতো, ইয়াবা সেবন করতো। আর কেউ গেলেই ‘ব্ল্যাকমেইল’ করা হতো। প্রেমিক-প্রেমিকা হলে তাকে ছবি তুলে আদায় করা হতো মুক্তি পণ। স্বামী-স্ত্রী গেলে কখনো কখনো স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হতো। এমন ঘটনা ওই টিলায় ঘটেছে অহরহ। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিকার পেতেন না। সম্ভ্রম, টাকা-স্বর্ণালংকার ওদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে ফিরতে হতো শূন্য হাতে।

সম্প্রতি একদিন বিকালে জগন্নাথপুরের এক তরুণ তার তালতো বোনকে নিয়ে এমসি কলেজের বাংলোর পেছনে গিয়ে বসেন। এমন সময় সাইফুর চক্রের সদস্যরা তাদের পায়। এক পর্যায়ে অসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে তারা ওই তরুণ-তরুণীর ছবি তুলে। এরপর ছেলেটিকে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ করে। টাকাও চায় তরুণীর কাছে। শুধু এই ঘটনাই নয়, খোদ এমসি কলেজের ভেতরে এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে এমসি কলেজের গার্ড মাইকেলকে ক্যাম্পাসেই গণধোলাই দেয়া হয়েছিলো। স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়। সাইফুর-রনি সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করতো মাইকেল। কেউ ক্যাম্পাসে গেলেই মাইকেল খবর দিতো ওই সিন্ডিকেটকে। মন্দিরের টিলার ঢালু জায়গাতে আড্ডাস্থল সাইফুর, রনি, রবিউলদের।

স্থানীয়রা জানান, বিকাল হলেই ধান্ধায় বের হতো তারা। চলে আসতো ওখানে। প্রতিদিনই মন্দিরের টিলায় ঘুরতে যায় তরুণ-তরুণীরা। আর তাদেরই টার্গেট করে ওরা। তাদের হাতে সম্ভ্রম হারানো অনেক নারী বিচার না দিয়েই চলে যান। কখনো কখনো কেউ বিচার প্রার্থী হলেও তাদের খোঁজ মিলে না। নাম-পরিচয় পাওয়া যায় না। ফলে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির শিকার হলেও নীরবে সহ্য করতেন সবাই। এমসি কলেজের ক্যাম্পাস ছিল ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা। তাদের কাছে অসহায় ছিল কলেজ প্রশাসনও। গত ৫ বছরে ক্যাম্পাসের পেছনের টিলায় অন্তত ১০টির মতো ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। অনেক ঘটনাই প্রশাসন জানতেন। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন না। ওদের কাছে জিম্মিই ছিল কলেজ প্রশাসন।

বরং খাদিজার ঘটনার পর থেকে প্রশাসন জানতো ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখছে। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন আহমদ দায়িত্ব গ্রহণের আগে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন নিতাই চন্দ্র চন্দ। সাবেক অধ্যক্ষের কাছে সাইফুর-শাহ রনি ও রবিউল সিন্ডিকেটরা তার কাছে হোস্টেলে বসবাসকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর বেতন ও খাওয়ার বিল মওকুফের দাবি জানান। এতে কলেজ অধ্যক্ষ অস্বীকৃতি জানালে তারা অধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করে। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ আহমদ দায়িত্ব গ্রহণের পরও নানা ভাবে তারা প্রভাব বিস্তার করে। এ কারণে কলেজ অধ্যক্ষ নিজেই স্বীকার করেছেন- তিনি অসহায় ছিলেন।

রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- বিকাল হলেই সাইফুর-রনির অপরাধের সঙ্গ দিতে তারা ছুটে যেতো এমসির ক্যাম্পাসে। শিশু স্কুলের পাশ দিয়ে তারা ওই এলাকায় প্রবেশ করতো। এমসির কলেজের হোস্টেল এলাকায় আগে নারী ধর্ষণের ঘটনা কখনো ঘটেনি। কিন্তু গত এক বছর ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে হোস্টেলের বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়- সন্ধ্যা নামলেই হোস্টেলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা খুব প্রয়োজন ছাড়া হলের রুম থেকে বের হতো না।

তবে- প্রায় সময়ই সাইফুর-রনি প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশায় মহিলাদের নিয়ে এসে ঢুকতো। এবং তারা শিক্ষক বাংলোতে চলে যেতো। এসব ঘটনা দেখলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না। হোস্টেলে সুপার থাকতেন না। ফলে হোস্টেলের নিয়ন্ত্রণ করতো তারাই। এমসি কলেজের পাশেই রয়েছে আলুর তল এলাকা। একই এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ার কলেজ অবস্থিত। বিকাল হলেই অনেক পর্যটক স্ত্রী ও বান্ধবীকে নিয়ে সেখানে ঘুরতে যান। তারা নির্জন, নিরিবিলি টিলায় গেলেই ওই এলাকায় একটি চক্র তাদের একইভাবে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণ করতো। এ ধরনের অনেক ঘটনা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে রটছে।

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
October 2020
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
0Shares