সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারি পাড়ার রায়হান আহমদ (৩৪) রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে মারা গেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- ছিনতাইয়কালে জনতার পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়া রায়হানকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। সেখানেই সকাল ৭টার দিকে তিনি মৃত্যুরবণ করেন।
তবে রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এক পুলিশের মোবাইল ফোন থেকে ফোন করে রায়হানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়।
পরিবারের অভিযোগ করেন, রায়হান আহমদ শনিবার রাতে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরেননি। ভোর রাত ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে রায়হান জানায় পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিবে।
এ কথা শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। চাচা হাবিবুল্লাহ ফাঁড়িতে গেলে এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন।
পরে সকাল ৯টার দিকে টাকা নিয়ে ফের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান হাবিবুল্লাহ। এসময় পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া (এস.আই) সিলেটভিউ-কে বলেন, শনিবার দিবাগত রাতে নগরীর কাষ্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয়রা রায়হানকে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রায়হানকে উদ্ধার করে এবং ভোর ৬টার দিকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর রায়হান মৃত্যুরবণ করেন।
তিনি বলেন, রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসাই হয়নি। ফাঁড়িতে নিয়ে আসার বিষয়টি সত্যি নয়।
রায়হানের মায়ের কাছে ফোনের বিষয়টি সম্পর্কে আকবর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়টি তার পরিবার ভুল বুঝেছে। এই ফোন থেকে রায়হান ফোন করে তাকে গণপিটুনি ও হাপসাতালে নিয়ে যাওয়ার খবরটি দিতে চেয়েছিলো পরিবারের কাছে। কিন্তু পরিবারের মানুষ এখন ভুল বুঝে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে।
ওই ফোন নাম্বার কি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হতে পারে কোনো পুলিশের, অথবা আশপাশ কারো। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।