খুনের রহস্য উদঘাটন! আবেগ ময় লেখাটি লিখেছেন মৌলভীবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  আশরাফুজ্জামান আশিক

৮ মাসের সুখের সংসার, স্বামী স্ত্রীর খুঁটিনাটি ঝগড়া, স্বামীর নিষ্ঠুর দুই হাত, ওড়না পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা,

  • আপডেট টাইম : May 19 2021, 15:51
  • 591 বার পঠিত
খুনের রহস্য উদঘাটন! আবেগ ময় লেখাটি লিখেছেন মৌলভীবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  আশরাফুজ্জামান আশিক

দেশটিভি  ডেস্ক।।।

এমন একটি নেক্কার জনক ঘটনার রহস্য উদঘাটনের বিবরণ মৌলভীবাজার জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান, আশিক আবেগময় একটি লেখা তিনির ফেসবুকে তুলে ধরেন। আমরা পাঠকদের জন্য লেখাটি প্রকাশ করলাম।

আম কিনতে গিয়ে পরিচয়,
মোবাইল নাম্বার বিনিময়,
কথা বলা , ভাললাগা, প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে।
৮ মাসের সুখের সংসার,
স্বামী স্ত্রীর খুঁটিনাটি ঝগড়া,
স্বামীর নিষ্ঠুর দুই হাত,
ওড়না পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা,
পুরো একদিন স্ত্রীর লাশের সংগে বসবাস,
পা ভেঙে বস্তাবন্দী করে রাখা প্রিয়তমা ,
সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে,
বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে,
নিস্তব্ধ চারপাশ, সুযোগ বুঝে ব্রিজের উপর থেকে
ফেলে দিল প্রেয়সীর বস্তাবন্দী মৃতদেহ।
বুক ভরা গভীর নিশ্বাস, সরে গেল হাজার মণ ওজনের পাথর।
আহ! শান্তি।
কেউ জানলা, কেউ শুনলনা!
কিন্তু বেরসিক পুলিশ হাজার চেষ্টা করেও
পেল না হতভাগিনীর পরিচয়।
অন্ধকারে আশার আলো ছিল বস্তার গায়ে লেখা দুটি শব্দ
” মো: অনিক শ্রীমঙ্গল ”
অনেকগুলো অনিক খুঁজে পেয়ে গেলাম কাঙ্ক্ষিত অনিক,
এবার শুরু মূল অভিযান, কে নিয়েছিল অনিক লেখা বস্তা
পুরো শহরে চষে বেড়াচ্ছে পুলিশের অনেকগুলো টীম। অবশেষে পেলাম সেই ব্যাক্তিকে, কিন্তু উনি ফেরেশতা কিছুই জানেন না, নিজের স্ত্রীর লাশের চেহারা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করার পর ও বলে ,চিনেনা । তখনও জানিনা, কি নির্মম সত্য অপেক্ষা করছে।
চলতে কথার ঝাপি, নাম, ধাম, স্ত্রী , সংসার আরও কত কি?
৪ টি বিয়ে, ৩ স্ত্রী বর্তমান ।
প্রথম স্ত্রী ২ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকে।
দ্বিতীয় স্ত্রী ১ ছেলে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকে।
তৃতীয় স্ত্রী বিয়ের একদিন পর ই চলে যায়।
চতুর্থ স্ত্রী কে নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করত সে ,
কিন্তু তিন দিন পুর্বে কিছু না বাড়ি থেকে চলে গেছে সে?
থানায় জানান নি কেন?
উত্তরে জানায় চতুর্থ স্ত্রীর বড় ভাইকে ফোন করে জানিয়েছেন। খটকা লাগে এখানটায়??????
ঠিকানা নিয়ে ফোনে কথা বলি ঝিনাইদহে থাকা চতুর্থ স্ত্রী ভাইয়ের সাথে, কথা বলে বুঝতে পারি
খুবই সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ।
কথা বলে একটি ছবি পাঠাতে চাই কিন্তু তার মোবাইল সেটা সাপোর্ট করে না । ঝিনাইদহে তখন ঝড়বৃষ্টি, সকালের আগে সে কোনভাবেই ইন্টারনেট সাপোর্টেট মোবাইল নম্বর দিতে পারবে না। অনেক অনুরোধ করে প্রতিবেশীর একটা মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাতে বস্তাবন্দী মৃতদেহের ছবি পাঠালাম।
উত্তরের অপেক্ষা…………..
হ্যাঁ, মৃতদেহটি তার হতভাগিনী বোন ডলির,
বিয়ে হয়েছে শ্রীমঙ্গলে , স্বামীর নাম মাসুদ,সেখানেই স্বামীর সাথে বসবাস করেন।
ঈদের পরদিন ফোন দিয়ে কথা বলেছিল,
ভাল নেই সে , স্বামী খুবই নির্যাতন করে।
ততক্ষণে বুঝে গেছি সবকিছু।
বলে রাখি উনি কিন্তু মৃতদেহ যে তার চতুর্থ স্ত্রীর তা এখনও চিনতে পারেন নাই ।
তার আচরণ খুবই স্বাভাবিক ও ধূর্ত এক খুনি সে।
রাত তখন গভীর তাই বলে থেমে যাওয়ার সুযোগ নেই
অগ্যতা মসুদকে নিয়ে চললাম মসুদ ও ডলির সংসার দেখতে।
বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেশীর কাছ থেকে জানতে পারলাম গতকাল রাত সাড়ে আটটায় সিএনজি অটোরিক্সার শব্দ পেয়েছেন।
শুরু হল সিএনজি খোঁজা, পরিবহণ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় সহজেই পেয়ে যাই সিএনজি চালক কে।
খবর দিতেই এসে হাজির হয় সিএনজি চালক।
কথা বলে জানতে পারি কিভাবে? কোন পথে? প্রিয়তমা স্ত্রী কে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী করে ব্রিজের উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়।
কতটা নিষ্ঠুর হলে সম্ভব, এমন ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী কে খুন করে লাশ বস্তাবন্দি করে গুম করার ????
ভালবাসা…..
বিশ্বাস ….
স্বপ্ন ….
সংসার …
স্বপ্নভঙ্গ….
হতাশা ….
অবিশ্বাস….
অনাকাঙ্খিত মৃত্যু….????

উল্লেখ্য যে, গত (১৮ মে) সকাল অনুমানিক ০৯.২০ ঘটিকার সময় শ্রীমঙ্গল থানাধীন ৪নং সিন্দুরখান ইউপি অন্তর্গত পশ্চিম বেলতলী সাকিনস্থ উদনার ছড়া ব্রিজের নিচে কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বস্তা বন্দি অবস্থায় অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ ফেলে যায়।
শ্রীমঙ্গল থানার এসআই মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বাদী হয়ে উক্ত বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) মোঃ হুমায়ূন কবির মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। মামলা দায়ের এর মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া এর নির্দেশে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুছ ছালেক ও অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের সহায়তায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হুমায়ূন কবির উক্ত হত্যাকান্ডে জড়ির মূল আসামী মোঃ মসুদ মিয়া (৬২), পিতা-মৃত এখলাছ মিয়া, মাতা-জমিলা বিবি, সাং-রামনগর (জোরাপুল), এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন এবং গ্রেফতারকৃত আসামীর নিকট হতে মৃত ডলি আক্তার (২৮) এর বাবার বাড়ির নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ পূর্বক ওয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ করে আসামীর সঠিক পরিচয় সনাক্তকরণ করা হয়।

 

0Shares
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
May 2021
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
0Shares